৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় অথবা ৭ দিনে ওজন কমানোর উপায় কি হতে পারে তা নিয়ে আজকের ব্লগে আলোচনা করব। যদিও ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় টা খুব একটা সহজ হবে না তারপরও যদি চেষ্টা করেন আপনাদের স্বাস্থ্য যদি ভালো থাকে বিশেষ করে কোন ধরনের জটিল কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ৭ দিনে ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় - বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী পদ্ধতি
বর্তমান সময়ে শরীর ফিট রাখা যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অন্যতম উপায়ও বটে। অনেকেই দ্রুত ওজন কমাতে চান, বিশেষ করে কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা এমার্জেন্সি উপলক্ষে। তাই আজকের এ ব্লগে আমরা জানব সাত দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। তবে মনে রাখবেন, দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করা উচিত।
আরো পড়ুন : কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়
তবে যেহেতু আপনি এই ব্লগে ঢুকেছেন তাই আপনাকে বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী পদ্ধতি গুলো খুব ভালোভাবে জানিয়ে দিব। চলুন তবে সময় ক্ষেপণ না করে মূল আলোচনায় চলে যায়।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অনুসরণ করুন
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণিত একটি উপায় হল ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। এতে আপনি ৮ ঘণ্টা খাবেন এবং ১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকবেন। এ পদ্ধতিতে শরীর নিজের জমে থাকা ফ্যাটকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করবে। যা আপনার বাড়তি মেদ অথবা চর্বিকে কমিয়ে দিয়ে আপনার স্বাস্থ্য কম করতে সাহায্য করবে।
সম্পূর্ণ চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্যাগ করুন
চিনি, কমল পানীয় এবং প্যাকেটজাত স্নাক্স গুলো ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এক সপ্তাহের জন্য যদি আপনি এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন, তাহলে শরীরের ইনসুলিন লেভেল নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং দ্রুত চর্বি গলাতে সাহায্য করবে। ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় যদি খুঁজে থাকেন তাহলে এই উপায় টা অবশ্যই অবলম্বন করবেন।
প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা ব্যায়াম করুন বা শারীরিক কর্ম করুন
ওজন কমাতে খাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো শারীরিক পরিশ্রম। দ্রুত ওজন কমাতে শারীরিক পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম অথবা ব্যায়াম করতে পারেন, এর থেকে বেশি সময় যদি করতে পারেন তাহলে আরো ভালো। তবে খেয়াল রাখবেন একদিনে বেশি শরীরে চাপ দেওয়া যাবে না ধীরে ধীরে দিতে হবে। কার্ডিও এক্সারসাইজ যেমন
- জগিং
- সাঁতার কাটা
- দড়ি লাভ দেওয়া
- দ্রুত গতিতে হাটা ইত্যাদি।
এগুলো প্রতিদিন এক ঘন্টা করে করলে শরীরে ক্যালরি বার্ন হবে অনেক বেশি। ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে শারীরিক পরিশ্রমকে বাদ দিলে আপনার ওজন কমানো অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে যারা এ আর্টিকেলটি পড়ছেন তারা অনেকেই শারীরিক পরিশ্রম করার জায়গা পান না। তবে আপনারা চাইলে পুশআপ করতে পারেন।
পানি পান করা বৃদ্ধি করুন
সাধারণত দিনে তিন থেকে চার লিটার পানি খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং খুদার পরিমাণ কমিয়ে ফেলে। যারা ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন তারা অবশ্যই পানি খাওয়াকে গুরুত্ব দিবেন। আপনি চাইলে খাবার পূর্বে অথবা দুপুরের খাবারের পূর্বে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার বাড়তি খাবার খাওয়া লাগবে না।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান
প্রোটিন যুক্ত খাবার শরীরের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং বেশির গঠন ও রক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। আর তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী। এ ধরনের খাবার না খেয়ে পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন : গাজর খাওয়ার উপকারিতা কি
এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে আর বাড়তি চর্বি জমিতে দিবে না। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিম, মুরগির গোশত, মাছ, বাদাম দই ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের বীজের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। বিশেষ করে চিয়া সিটে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন যার দীর্ঘ সময় ক্ষুধা অনুভব হতে দিবে না ফলে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং ওজন কমানো সহজ হবে। আর তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকার মধ্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে রাখুন এতে ওজন নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ হয়ে উঠবে।
অল্প সময়ে বেশি ক্যালরি পোড়ানোর কার্যকর উপায়
হাই ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং ইংরেজিতে HIIT (High-Intensity Interval Training) এটি এমন একটি ব্যায়াম পদ্ধতি, যা অল্প সময়ে শরীর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্যালরি খরচ করাতে সাহায্য করে। এটি শুধু ক্যালোরি পোড়ায় না বরং শরীরের মেটাবলিজম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।
এই ব্যায়ামটি সাধারণত 20 থেকে 30 সেকেন্ড ধরে তীব্র গতিতে করা হয় তারপর 15 থেকে 20 সেকেন্ড বিশ্রাম নেয়া হয়। এভাবে 15 থেকে 20 মিনিট নিয়মিত এই ব্যায়াম করলে শরীরের শক্তি বাড়ে এবং চর্বির দ্রুত গলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে এই ব্যায়ামটি সব থেকে কার্যকরী একটি উপায়।
ঘুমের মধ্যে স্বাভাবিকতা রাখুন
সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম শরীরের সামগ্রিক কার্যক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আর পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে কালটিসল নামক স্ট্রেস হরমোন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় মানসিক চাপের জন্য আপনি ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারছেন না, মানুষের চাপ কমাতে আপনি নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করুন মেডিটেশন এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে পারেন। এ ধরনের অনুশীলন শুধু স্ট্রেস কমায় না বরং ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
যদি আপনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না পান, তাহলে শরীরে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় পড়ে যেতে পারেন। এর মধ্যে সবথেকে বড় জটিলতা হলো ওজন বৃদ্ধি হয়ে যাওয়া। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে স্বাভাবিক মেজাজ খিটমিটে হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
৭ দিনে ওজন কমানোর উপায়
অল্প সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শরীরের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত ঘটতে পারে। তবে সাত দিনে ওজন কমানোর বেশ কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে। ডাক্তারদের পরামর্শ মতে এগুলো যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে ৭ দিনে ১০ কেজি না হলেও অল্প কিছুটা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন। আসুন জেনে নেই সে নিয়ম গুলো কি।
আরো পড়ুন : টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়
- বেকার সময় বসে না থেকে হাটাহাটি করুন
- ভাত খাওয়ার সময় টিভি দেখবেন না, কারণ ভাত খাওয়ার সময় টিভি দেখলে আমরা অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলি। যা প্রায় 288 ক্যালোরি। আর তাই ওজন কমাতে চাইলে টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া যাবে না।
- ফলমূল দিয়ে তৈরিকৃত সালাদ খাবেন, সালাদের সাথে অতিরিক্ত মেয়োনিজ বা মাংসের ঝোল মাংস ইত্যাদি মেশাবেন না। এতে ক্যালরি বেশি বৃদ্ধি পাবে। শসা এবং টমেটো দিয়ে সালাদ খাবেন।
- অল্পতেলে রান্না করা খাবার খাবেন, আধা সেদ্ধ খাবার, ডিম ভাজা না খেয়ে ডিম পোচ খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- অতিথিদের বাড়িতে গেলে সচরাচর একটু বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
- দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে যেকোনো ধরনের চিনি জাতীয় খাবার এবং কোলড্রিংস একেবারে ত্যাগ করতে হবে পরে আসতে স্বাভাবিকভাবে একটু-আধটু খেতে পারেন। তবে চিনি পুরোপুরি না খাওয়াই ভালো।
- দ্রুত ওজন কমানোর তাগিদে খাবারদাবার বাদ দিবেন না, বরং দুই ঘন্টা পর পর ফলমূল এবং হালকা প্রোটিনযুক্ত খাবার খাবেন। এতে আপনার পেট না ভরিয়ে ক্ষুধা নিবারণ হয়ে যাবে। যার ফলে অতিরিক্ত চর্বি জমবে না।
- প্রতিদিন চেষ্টা করুন ১০ কিলোমিটার বেগে ১ ঘন্টা হাটার অথবা দৌড়ানোর। এভাবে যদি প্রতিদিন এক ঘন্টা হাঁটতে পারেন দ্রুত গতিতে তাহলে আপনার এক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিদিন ৫০০ কিলো ক্যালরি বার্ন হবে যা ওজন কমাতে খুবই সহায়ক।
- ওজন কমানোর চেষ্টা যখন করবেন তখন খেয়াল রাখবেন সব সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার। কেননা দ্রুত গতিতে ওজন কমাতে গেলে অনেক সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই ফলমূল শাকসবজি এগুলো বেশি বেশি খাবেন।
দ্রুত ওজন কমানোর খাবার তালিকা
সম্প্রতি একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে, ওজন কমাতে গেলে না খেয়ে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। বরং সঠিক খাবার নির্বাচন করে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি তৈরি করতে হবে। এতে আপনি ঘনঘন খাবার খেয়েও বা পেট ভরে খাবার খেয়েও ওজন কমিয়ে ফেলতে পারবেন আসুন জেনে নেই সেই খাবার তালিকা গুলো কেমন।
- প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে খাবেন কুসুম গরম পানি দিয়ে লেবু। একটা পূর্ণ লেবু দিয়ে হালকা কুসুম গরম পানিতে এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে লেবুটি চিপে ভাল করে মিশিয়ে খেয়ে নেবেন। সাথে রাখতে পারেন কাঁচা ভেজানো বাদাম এবং তিনটা খেজুর।
- সকালের খাবার হিসেবে খেতে পারেন সবজি খিচুড়ি, ওটস অথবা বেসন বা মুগ ডালের রুটি।
- দুইটি সিদ্ধ করা ডিম এবং শসা। এবং ফলমূলের মধ্যে একটি আপেল কলা এবং পেঁপে খেতে পারেন।
- তারপরে দুই ঘন্টা পরে যদি আপনার পুনরায় ক্ষুধা লাগে তাহলে একটি ফল খেতে পারেন, সাথে গ্রিন টি খাবেন।
আরো পড়ুন : রানের চিপায় চুলকানি দুর করার ক্রীম
- ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে দুপুরের খাবারের দিকে বেশ ভালো নজরদারি করতে হবে। দুপুরে ভাতের পরিবর্তে আপনি একটি রুটি খাবেন। সাথে এক বাটি তরকারি নিতে পারেন পেট ভরানোর জন্য এবং অবশ্যই সেটা যেন সবজি হয়। এবং সালাদ আর দই রাখতে পারেন।
- এ সমস্ত খাবার যদি আপনি খেতে পারেন দুপুর বেলায় এবং সকালের খাবারগুলো নিয়ম করে তাহলে আপনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারবেন।
- বিকাল বেলায় ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য, আপনি ছোলা খেতে পারেন ভাজা বা কাঁচা, বাদাম খেতে পারেন গুনে গুনে বিশটা বাদাম খাবেন।
- এবং সবশেষে রাতের খাবার খাবেন যতটা পারেন হালকা করে খাওয়ার। রাতে খাবেন ডাল, মিক্স সবজি, যেকোনো ধরনের সবজি সুপ খেতে পারেন। আর এক কাপ পরিমাণ দুধ খেতে পারেন।
শেষ কথা
সাত দিনের ওজন কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন মতামত ও তথ্য দিয়ে। তবে আপনারা যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাবার দাবার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন। এখানে যে তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী।
আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বেকারির যেকোনো ধরনের খাবার কোল্ড্রিংস, চিনি, এবং মিষ্টি জাতীয় যত খাবার আছে এগুলো সাময়িকভাবে একবারে পরিহার করে ফেলুন। এতে দ্রুত ওজন কমাতে যথেষ্ট সাহায্য করবে। দেখুন ওজন কমানোর মানে না খেয়ে থাকা নয় বরং সময়মতো সঠিক খাবার গ্রহণ করা।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ❤️