*/

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় - এবং মন ভালো রাখার ১০ খাবার

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মানসিকভাবে অনেকটাই অসুস্থ। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় মন খারাপ এবং অনেক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য মূলত আজকে আলোচনা করব মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় নিয়ে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য কেন ভালো রাখতে হবে

মানসিক স্বাস্থ্য বলতে বোঝায় মানুষের স্বাভাবিক আচরণ অনুভূতি আত্মীয়-স্বজনদের সাথে এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক এবং নিত্য দিনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা, তাছাড়া মানসিক শান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসার এই সামাজিক ভারসাম্যকে মানসিক স্বাস্থ্য বলা যায়। যা একজন স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষ এগুলো একাই করতে পারে যদি তার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।


আপনাকে কেন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে জানেন, ধরুন আপনি একজন চাকরিজীবী বা যাই করেন না কেন আপনার কর্ম ক্ষেত্রে কর্ম ঠিক রাখার জন্য বা বজায় রাখার জন্য আপনার বস আপনার কলিগদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য এবং আপনার পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে ভালো থাকার জন্য আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে।

এগুলো শুধুমাত্র নিতান্ত নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কথা তুলে ধরলাম। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার মূল বিষয় হচ্ছে নিজের মানসিক ভারসাম্য এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখা। যা প্রতিটা মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় সম্পর্কে।


তাছাড়া আপনার মানসিক স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে তাহলে আপনি কোন ধরনের কাজে মন বসাতে পারবেন না, খেয়াল করে দেখবেন আপনার মেজাজ বেশিরভাগ সময় খিটমিটে হয়ে থাকবে। অল্পতেই রেগে যাবেন আবার সবকিছুর মধ্যে মধ্যে অবসাদ অবসাদ অনুভব করবেন। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় একা থাকতে ভালো লাগে, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য লোপ পেলে এই একাকীত্ব ভালো হয় না। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের ভালো রাখতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার অনেকগুলো উপায় রয়েছে, তবে সবগুলো উপায় প্রতিদিন আমাদের পক্ষে নিয়ম করে পালন করে যাওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার নিয়ম করে বা দৈনিক খাবার তালিকায় রাখলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হবে না। আসুন জেনে নেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলো কি কি।
  • শারীরিকভাবে নিজেকে সক্রিয় রাখতে হবে
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান
  • কর্মের বাইরে কিছুটা বিরতি গ্রহণ করুন
  • বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন
  • যোগ ব্যায়াম করা শিখুন
  • অনুভূতি শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে বা কাছের কারো সাথে
  • আপনার ভালোলাগার শখকে প্রাধান্য দিন
  • অতিরিক্ত মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
  • সমস্যা বেশি মনে হলে সাহায্য গ্রহন করুন
  • বন্ধুদের সাথে সময় দিন
  • সব সময় নতুন কিছু শেখার আগ্রহ রাখুন
  • জীবনের রুটিন মেনে চলবেন
  • প্রতিদিন পারলে একবার মেডিটেশন করবেন
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে সবথেকে কার্যকরী উপায় নিয়ে আজকে আপনাদের মাঝে আমি উপস্থাপন করেছি এই আর্টিকেলে। উপর যে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়গুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এগুলো গবেষণায় ডাক্তারদের বিভিন্ন মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। আর তাই আমি চেষ্টা করেছি সব থেকে কার্যকরী এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো তুলে ধরবার।

মন ভালো রাখার খাবার সমূহ

মানসিক স্বাস্থ্য শুধু শারীরিক ব্যায়াম এবং জীবনের বিভিন্ন ধরনের রুটিন পরিবর্তন বা মেনে চললেই যে ভালো থাকবে ব্যাপারটা তা নয়। একজন স্বাভাবিক মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের অনেকটাই নির্ভর করে খাবারের ওপর। একটা গবেষণা দেখা গেছে কিছু নির্দিষ্ট ধরনের খাবার রয়েছে যা মানুষের মস্তিষ্কে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়

যাদের খাবারে বেশি শাকসবজি, ফল, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের শস্য, সামুদ্রিক মাছ এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় খাবার এবং মাছের তেল প্রতিদিন যারা গ্রহণ করছে তাদের মধ্যে মানসিক বিষন্নতা অন্য মানুষদের থেকে কম থাকে বলতে পারেন অনেকটাই কম।

যাকে আপনারা বলতে পারেন মেন্টালি স্যাটিসফ্যাকশন। এ ধরনের খাবারগুলো সাধারণত ডোপামিন ও সেরেটোনিন এর মত যা মানুষের মস্তিষ্ক থেকে আনন্দদায়ক বা বলতে পারেন হ্যাপি হরমোন নিশ্রিত করে থাকে। আর তাই বলা হয়ে থাকে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে খাবারের উপর নির্ভর করে। আসুন তবে জেনে নেই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার গুলো কি।


১.জিংক জাতীয় খাবার : জিংক জাতীয় খাবার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। এবং খাবারে যদি জিংকের পরিমাণ কম থাকে তাহলে একজন স্বাভাবিক মানুষের মানসিক বিষন্নতার সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ জিংক আমাদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে,

এখন তাহলে জানতে হবে কোন ধরনের খাবার জিঙ্ক আছে, জিংক জাতীয় খাবারগুলো হচ্ছে, মিষ্টি কুমড়ার বিচি,ডিম, গরুর মাংস, মাশরুম, তিল, পালং শাক, কাজুবাদাম, মাছ, দই, দুধ এই সমস্ত খাবারগুলোতে বেশ ভালো পরিমানে জিংক থাকে। আর তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকার মধ্যে এই জিংক জাতীয় খাবার গুলো রাখার চেষ্টা করুন।

২.ভিটামিন বি১২ : বিরক্তি, ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ, হতাশা এ ধরনের সমস্যাগুলো ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে হয়ে থাকে। ভুলে যাওয়া বা বিস্মৃতি এই ভিটামিনের ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি লক্ষণীয়।


চেষ্টা করুন স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতে ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার। যেসব খাবারে ভিটামিন বি ১২ পাবেন, দুধ, পনির, দই ইত্যাদি জাতীয় খাবারে ভিটামিন বি ১২ পাবেন যা আপনার স্মৃতিশক্তিকে আরো মজবুত করে তুলবে।

৩.শস্যদানা : বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ এবং আঁশ থাকে শস্যদানায়। শস্যদা নাই উপস্থিত গ্লুকোজ মানুষের মস্তিষ্কে সরাসরি ব্যবহৃত হয়। শস্যদানা যেমন, লাল চাল, লাল আটা এই ধরনের শস্য দানা দিয়ে তৈরিকৃত খাবার। এই খাবারগুলো খেলে আপনি খনিজ গ্লুকোজ পাবেন যা আপনার মস্তিষ্কের উন্নতি সাধন করবে।


৪.আয়রন জাতীয় খাবার : মানসিক বিষন্নতা বা স্মৃতি লোক পাওয়ার অন্যতম এক কারণ হচ্ছে শরীরে আয়রনের ঘাটতি। আয়রনের অভাবে শরীরে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা তৈরি হবার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়। তবে এই মানসিক সমস্যাগুলো এমন না যে মানুষ পাগল প্রায়, সমস্যাগুলো হচ্ছে আপনার কোন কাজে মনোযোগ দিতে ইচ্ছে করবে না, চাইলেও আপনি মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পারবেন না।

আর এই কারণে আয়রন জাতীয় খাবার আমাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন রাখা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে আয়রন কোন ধরনের খাবারে পাওয়া যাবে? সবুজ শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, জাম, তরমুজ, কালো শাক, সিনের বিচি, ছোলা, ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি ধরনের খাবারের মধ্যে আইরন উপস্থিত থাকে যা আমাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়ক।

৫.ভিটামিন সি জাতীয় খাবার : মানসিক বিষন্নতা কমাতে ভিটামিন সি যথেষ্ট সাহায্য করে। মানব মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্স মিটারের স্বাভাবিক চলাচল এবং তথ্য আদান-প্রদানে ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। কারণ এই ভিটামিন সি হ্যাপি হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। যা আমাদের মস্তিষ্কে সুখানুভূতি ঘটায়।

লেবু এবং লেবু জাতীয় যতগুলো খাবার রয়েছে সবগুলোতে ভিটামিন সি পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি এর এখন এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সচেতন হোন। জাম্বুর, মালটা, কমলালেবু, পেঁপে, বিভিন্ন সবুজ শাক-সবজি, কাঁচা মরিচ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

৬. ডার্ক চকলেট : ইনস্ট্যান্ট মানসিক শান্তি পেতে চাইলে ডার্ক চকলেট খাওয়া ভালো। ডার্ক চকলেট রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি হয়।

৭. গ্রিন টি : থিয়ানিন নামক এক ধরনের অ্যামিনো এসিড থাকে এই সবুজ চা বা গ্রিন টি তে। এই গ্রিন টি মানুষের মানসিক চাপ কমিয়ে, মানসিকভাবে সতেজ রাখতে এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।

৮. সামুদ্রিক মাছ : সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে অমেগা ৩ ফাটি এসিড থাকে। যা মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখার চেষ্টা করুন, যেমন স্য়ামন মাছ, টুনা মাছ ইত্যাদি।


৯. কলা এবং ডিম খাওয়া : মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী এবং সহজলভ্য যে খাবারগুলো আছে তা হচ্ছে কলা এবং ডিম। কলায় থাকা ভিটামিন বি ৬ এবং ট্রিপটোফ্য়ান মানব মস্তিষ্কে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

অনুরূপ ডিমেও রয়েছে একই ভিটামিন যা মস্তিষ্কে সুখানুভূতি তৈরি করতে সাহায্য করে। ডিম মানুষের মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখে তাই প্রতিদিন ডিম খান এবং মানসিক স্থিরতা ভালো রাখুন।

১০. সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাকসবজি : সবুজ পাতা বিশিষ্ট শাক এবং সবজি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। মস্তিষ্কের সঠিক পুষ্টি এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য যে ধরনের ভিটামিনস গুলো প্রয়োজন সবগুলোই এই সবুজ শাকসবজিতে পাবেন।

১১. সব ধরনের ফলমূল : আপেল, আখরোট, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, ব্রকলি, বেরি, কুইনোয়া ইত্যাদি ধরনের ফলমূল খেলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। প্রতিদিন খাদ্য তালিকার মধ্যে এই ধরনের যে কোন এক প্রকার ফল বা খাবার রাখা উচিত শিশু এবং বৃদ্ধদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য।

শেষকথা

আমাদের যেমন সুস্থ শরীরের প্রয়োজন, তেমনি সুস্থ মনের প্রয়োজনও রয়েছে। আর তাই মস্তিষ্ককে হ্যাপি হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন। প্রতিদিন কিছু সময় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কাটাবেন, এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার গুলো নিত্যদিনের খাবার তালিকায় রাখার চেষ্টা করবেন। তাহলে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url